প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার

প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার
গণিত যেমন কেবল গণিতবিদেরাই ব্যবহার করেন না, বরং বিজ্ঞানের সব শাখায় রয়েছে এর ব্যবহার, তেমনই প্রোগ্রামিংও কিন্তু কেবল কম্পিউটার বিজ্ঞানী বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামিং জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পেশা হিসেবে প্রোগ্রামিংয়ের আলাদা একটি গুরুত্ব আছে আমাদের জন্য। যেহেতু বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরার অনেক সুযোগ এখানে রয়েছে ,তাই বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করে সরাসরিই বিশ্বের নামকরা সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেমন– গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক ইত্যাদিতে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন প্রোগ্রামার নিজের মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য আবেদন করার প্রয়োজন হয় না, তারা নিজে থেকেই বিভিন্ন দেশের সেরা প্রোগ্রামারদের খুঁজে বের করে।
বিশ্ববিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ছাড়াও প্রোগ্রামারদের জন্য আরেকটি সুবিধা হচ্ছে Telecommuting। অর্থাৎ কোনো অফিসে না গিয়ে কাজ করার সুযোগ। উন্নত বিশ্বের অনেক কোম্পানি তাদের নিজ দেশে প্রোগ্রামারদের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের প্রোগ্রামারদের কাজের সুযোগ দেয়, আর সে ক্ষেত্রে নিজ দেশে বসেই কাজ করা যায়। কারণ ওই কোম্পানিগুলো জানে যে আমাদের মত দেশের অর্থনীতি উন্নয়নশীল হলেও প্রোগ্রামাররা মোটেও অদক্ষ নন, বরং বিশ্বমানের প্রোগ্রামার। বাংলাদেশের বেশকিছু প্রোগ্রামার এখন বাংলাদেশে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করছেন আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সফটওয়্যার কোম্পানিতে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেউ যদি ধরাবাঁধা চাকরি করতে না চায় তবে তার জন্য ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামিংয়ের সুযোগ রয়েছে। ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে ছোট-মাঝারি-বড় বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারের প্রজেক্ট থাকে যেগুলোতে বিড (bid) করে কাজ করা যায়। বাংলাদেশে এখন শত শত প্রোগ্রামার ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এর জন্য কেবল কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই চলবে। ফ্রিল্যান্স কাজ করার জন্য বিপুল ধৈর্যের প্রয়োজন। আর ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ছাত্রাবস্থায় এ ধরনের কাজ না করাই ভালো। কারণ ছাত্রজীবনে লেখাপড়া করার ও মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করার যে সময় ও সুযোগ মেলে, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে কখনোই সেই সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই তোমাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে যে ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে প্রচুর লেখাপড়া এবং সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার চেষ্টা করবে, যেগুলো তোমার ভালো লাগে।
সব শেষ কথা হচ্ছে, প্রোগ্রামিং এমন একটি কাজ যেখানে সব সময়ই তোমার নিজেকে উন্নত করার সুযোগ আছে। তাই লেখাপড়া করার মানসিকতা থাকতে হবে, পড়তে হবে নানা বইপত্র, ঘাঁটতে হবে ইন্টারনেট। নিজে কোনো সমস্যায় পড়লে প্রথমেই ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখবে যে সমস্যাটির সমাধান ইতিমধ্যে কেউ করে রেখেছে কি না। বিভিন্ন ফোরাম ও ব্লগে সাধারণত প্রোগ্রামাররা কিছু কমন সমস্যার সমাধান দিয়ে রাখে। তবে প্রোগ্রামিং শেখার সময় কিন্তু সমাধানের জন্য ইন্টারনেট ঘাঁটবে না, নিজে চেষ্টা করবে
Share:

0 comments:

Post a Comment

Pages

Theme Support